ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ঈদের দিনে সড়কে ঝরল ২০ প্রাণ

নিউজ ডেস্ক ::

ঈদের দিন সড়ক দুর্ঘটনায় সাত জেলায় ২০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ফরিদপুরে ছয়জন, লালমনিরহাটে তিনজন, ঝিনাইদহে দুইজন, ঢাকার সাভারে এক পুলিশ সদস্য, নরসিংদীতে তিনজন, টাঙ্গাইলে দুইজন ও সিরাজগঞ্জে তিনজন নিহত হয়েছেন। বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে বলে জেলা প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।

ফরিদপুর : ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ফরিদপুর সদর উপজেলার ধুলদী রেলগেট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ২৩ জন। বুধবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে মহাসড়কের ধুলদী রেলগেট এলাকায় একে ট্রাভেলসের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ঢাকা কলেজের দর্শন বিভাগের সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার আজাদ সৈকত (২০), গাড়ির চালক খুলনার দৌলতপুরের শুকুর আলী (৩৫), ফরিদপুরের মধুখালীর ছুরমান মোল্লা (৩২), আলফাডাঙ্গার শাহাবুদ্দিন মৃধা (৩৫) এবং মাগুরার শালিখার মালেক মাঝি (৪৮)। অন্যজনের নাম জানা যায়নি।

ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. নুরুল আলম দুলাল জানান, সকাল পৌনে ৭টার দিকে একে ট্রাভেলসের একটি বাস ঢাকা থেকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নিয়ে ফিরছিল। ধুলদী রেলগেট এলাকায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে পথিমধ্যে আরও দুইজন মারা যান। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৩ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে তিনজন নিহত হয়েছেন। বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের শিমুলতলা বাজারে কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নিলুর খামাড় এলাকার মোজাম্মেল হকের ছেলে হাফিজুর রহমান (২৫), রংপুর তাজহাটের শেখপাড়া এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (২৮) এবং ফারুক হোসেন (২৬) নামে একজন।

লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রংপুর থেকে ছেড়ে আসা কুড়িগ্রামগামী একটি পিকআপ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বড়বাড়ি স্মৃতিসৌধে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই পিকআপের তিনজন যাত্রীর মৃত্যু হয়। এতে আহত হন অন্তত আট যাত্রী। আহতদের লালমনিরহাট সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের মহেশপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত হয়েছেন। এতে আরও একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার খোর্দ্দ-খালিশপুর নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- কোটচাঁদপুর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের আলিম হোসেনের ছেলে বিপলু হোসেন (২০) ও চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর গ্রামের আসাদুল ইসলামের ছেলে রানা (১৩)।

কোটচাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের সাব-স্টেশন অফিসার প্রদীপ মন্ডল জানান, সকালে কোটচাঁদপুর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রাম থেকে তিনজন মোটরসাইকেল যোগে খালিশপুর শহরের দিকে আসছিলেন। পথিমধ্যে খোর্দ্দ-খালিশপুর নামক স্থানে পৌঁছালে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে তিনজনই গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বিপলু ও রানাকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত ফিরোজ হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

narsingdi

সাভার (ঢাকা): ঈদের নামাজ পড়া হলো না শিল্প পুলিশের কনস্টেবল নাদিম হোসেনের (২৬)। বুধবার সকালে সাভারের আশুলিয়ার বলিভদ্র এলাকায় পুলিশবাহী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে লিচুবোঝাই ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় শিল্প পুলিশের আরও তিন সদস্যসহ মোট চারজন আহত হয়েছেন।

সকালে আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের গণকবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় লিচুবোঝাই ট্রাকটিসহ চালক ইউসুফ ও হেলপারকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত নাদিম হোসেন নওগাঁ সদর উপজেলার উলাসপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। আহতরা হলেন- শিল্প পুলিশের নায়েক জাকারিয়া, কনস্টেবল কাউছার, কনস্টেবল আনিসুজ্জামান এবং অটোচালক।

সাভার মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মলয় সাহা জানান, ডিইপিজেড এলাকার নতুন জোন থেকে রাতের ডিউটি শেষে শিল্প পুলিশের ওই চার সদস্য ব্যাটারিচালিত একটি অটোতে করে ব্যারাকে যাচ্ছিলেন। ব্যারাকে যাওয়ার পথে গণকবাড়ি এলাকায় উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী একটি লিচুবোঝাই ট্রাক পুলিশবাহী ব্যাটারিচালিত অটোটিকে ধাক্কা দেয়। এতে শিল্প পুলিশের চার সদস্য ও অটোচালক আহত হন। পরে তাদের সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কনস্টেবল নাদিম হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন।

নরসিংদী : নরসিংদীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। বুধবার দুপুরে সদর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভগিরথপুর ও শিবপুরের সিএনবি এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

এর মধ্যে দুপুর ২টার দিকে সদর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভগিরথপুর এলাকায় দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- আশুগঞ্জ বাহাদুরপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ মিয়ার ছেলে মামুন মিয়া (২০), মাধবদী আলগী গ্রামের তালিম মিয়ার ছেলে পাওয়ারলুম শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক (২৮)।

পুলিশ জানায়, ঢাকা থেকে তৃষা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছিল। গাড়িটি সদর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভগিরথপুর এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মাধবদীগামী রংধনু পরিবহনের বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজন মারা যান। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে নেয়ার পর আরও একজনের মৃত্যু হয়।

মাদবদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান বলেন, দুর্ঘটনায় দুইজন মারা গেছেন। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে শিবপুরের সিএনবি এলাকায় বাস ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। তবে তার নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

টাঙ্গাইল : ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের কালিহাতী উপজেলার সল্লা এলাকায় পিকআপ ভ্যানে বাসের ধাক্কায় দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও সাতজন। বুধবার দুপুরে মোটরসাইকেলের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানটি পাল্লা দিতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- জেলার বাসাইল উপজেলার হাবিবুর রহমানের ছেলে সোহাগ (২২) ও একই উপজেলার সিরাজুল ইসলামের ছেলে সজিব (২৩)

narsingdi

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেন, কয়েকজন যুবক টাঙ্গাইল থেকে পিকআপ ভ্যান নিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর দিকে ঘুরতে যাচ্ছিল। পথে পিকআপ ভ্যানটি একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছিল। পিকআপ ভ্যানটি সল্লা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেল ওভারটেক করার সময় ঢাকাগামী কিরণমালা পরিবহনের একটি বাস পিকআপটিতে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই একজন মারা যান। আহত হন আরও আটজন। তাদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক আরও একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকচালক ও হেলপারসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। এ সব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৩ জন। বুধবার সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত হাটিকুমরুল-বগুড়া মহাসড়কের ভুইয়াগাঁতী, তবারিপাড়া ও ষোল মাইল এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতদের মধ্যে- নেত্রকোনার বাসিন্দা ফারুক (৪০) ও চন্দনের (৩৮) নাম জানা গেছে। অন্যজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি।

রায়গঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার সেরাজুল ইসলাম জানান, দুপুরে ভুইয়াগাঁতী পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় একটি মিনি ট্রাকের সঙ্গে একটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে মিনি ট্রাকের চালক ফারুক ও হেলপার চন্দন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে রায়গঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুইজনই মারা যান।

এর আগে সকালে একই মহাসড়কের তবারিপাড়া এলাকায় ঢাকাগামী ডিপজল পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীতমুখী একটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে বাসের হেলপারসহ সাতজন আহত হন। খবর পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তির পর দুপুরের দিকে বাসের হেলপার মারা যান।

অপরদিকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে একই মহাসড়কের ষোলমাইল এলাকায় ঢাকাগামী আদর পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে সাত যাত্রী আহত হন। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পাঠকের মতামত: